নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কারখানায় (সেজান জুস) অগ্নিকাণ্ডে ৫২ জনের মৃত্যুর ঘটনার ৮ দিন আগে দায়েরকৃত মামলায় প্রতিষ্ঠানটির মালিক (চেয়ারম্যান+এমডি) এম এ হাসেম ও উপ মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মামুনুর রশিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা (ওয়ারেন্ট) জারি করেছেন শ্রম আদালত।
মঙ্গলবার ২ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান কিরন শংকর হালদার এই ওয়ারেন্ট জারি করেন।
মামলার বাদি কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জের শ্রম পরিদর্শক নেছার উদ্দিন এর সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ২০২১ সালের ৮ জুলাই সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার রূপগঞ্জ উপজেলার কর্ণগোপ এলাকায় অবস্থিত হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কারখানায় (সেজান জুস) অগ্নিকাণ্ডে ৫২ জন নিহত হয়। তবে অগ্নিকান্ডের ঠিক ৮ দিন আগে ২০২১ সালের ৩০ জুন শ্রম আইনের ৯টি ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগে আমি বাদী হয়ে ঢাকার শ্রম আদালতে একটি মামলা (২১২/২০২১) দায়ের করেছিলাম। যাতে অভিযুক্ত করা হয়েছিল কারখানার মালিক (চেয়ারম্যান+এমডি) এম এ হাসেম ও উপ মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মামুনুর রশিদকে।
ওই মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছিল, করোনা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কারখানায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। কারখানার পূর্ব দিকের ছয়তলার কক্ষে নির্মল বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা না থাকা, পরিদর্শক কর্তৃক কাজের সময়সূচির নোটিশ অনুমোদন না করা, কার্যকর সেফটি কমিটি না থাকা, যন্ত্রপাতি স্থাপনের ক্ষেত্রে দেয়াল থেকে দেয়ালের দূরত্ব এক মিটার না রাখা, অনুমোদিত নকশার সঙ্গে বর্তমান কারখানার মেশিন আউট-লেট প্ল্রানের সামঞ্জস্য না থাকা, বর্তমান শ্রমিক সংখ্যানুপাতে লাইসেন্স ক্যাটারি সঠিক না থাকা এবং ভবনের ভেতরে বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকা।
ঢাকার শ্রম আদালতে দায়েরকৃত মামলাটি সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ শ্রম আদালতে স্থানান্তর করা হয়েছে যার নাম্বার ২৮৭/২০২৪। ওই মামলায় মঙ্গলবার ২ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ শ্রম আদালতের বিচারক আসামীদ্বয়ের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারী করেছেন।
উল্লেখ্য, হাসেম ফুডসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৫২ জনের মৃত্যুর ঘটনায় রূপগঞ্জ থানায় ২০২১ সালের ১০ জুলাই একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন পুলিশের একজন কর্মকর্তা। ওই মামলায় পুলিশ কারখানা মালিক এম এ হাসেম (৭০), তার ছেলে হাসীব বিন হাসেম ওরফে সজীব (৩৯), তারেক ইব্রাহীম (৩৫), তাওসীব ইব্রাহীম (৩৩), তানজীম ইব্রাহীম (২১)শাহান শান আজাদ (৪৩), কারখানার উপ মহাব্যবস্থাপক মামুনুর রশিদ (৫৩) ও মো. সালাউদ্দিনকে (৩০) গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়া ওই বছরের ১৫ জুলাই কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক সৈকত মাহমুদ বাদী হয়ে ঢাকার শ্রম আদালতে আরো মামলাটি দায়ের করেন। শ্রম আইনের ৮০ ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগে ৩০৭ ধারায় কারখানার মালিক আবুল হাসেম ও উপমহাব্যবস্থাপক মামুনুর রশিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছিল। ৮০ ধারা হলো, যদি কোন প্রতিষ্ঠানে কোন দুর্ঘটনা ঘটে প্রাণহানি বা শারীরিক জখম হয় অথবা যদি কোন প্রতিষ্ঠানে দুর্ঘটনাজনিত বিস্ফোরণ, প্রজ্জলন, অগ্নিকাণ্ড ইত্যাদি ঘটে তাহলে মালিক বা উপ মহাপরিদর্শককে পরবর্তী দুই কর্ম দিবসের মধ্যে নোটিশ দিয়ে অবহিত করতে হবে।
তবে পুলিশের দায়েরকৃত মামলার চার্জশীটে উল্টো শ্রম আদালতে দায়েরকৃত দুই মামলার বাদিকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। হাসেম ফুডস অগ্নিকান্ডে ৫৪ জন নিহতের ঘটনায় ২০২৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর মালিকপক্ষকে অব্যাহতি দিয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। অভিযোগপত্রে কারখানার চার কর্মকর্তা ও সরকারের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের দুই পরিদর্শককে আসামি করা হয়েছে।